শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকের খারাপ লাগতে পারে। অথচ ব্যাপারটা কিন্তু এমন হওয়ার কথা ছিল না । যে কোন মৃত্যুতেই আমাদের সহানুভূতি জাগার কথা ছিল। কিন্তু জাগে না । একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন যখন কোন কাউকে মেরেফেলার কথা শুনেন কিংবা কার মৃত্যুর সংবাদ শুনেন তখন আপনাদের সবার মনে একটা বিষাদের জন্ম হয়। কিন্তু একই সাথে যখন সেই মৃত মানুষের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের ট্যাগ যুক্ত থাকে তখন একেবারে বুলেটের গতিতেই সেই অনুভূতি চলে যায় ! আপনাদের হয় কিনা জানি না কিন্তু আমার হয় ! মানুষ মারা গেলে কষ্ট যেমন লাগে ঠিক তেমনি রাজনৈতিক কর্মী মারা গেলে কিছুই মনে হয় না আমার। কেন হয় না? এই বোধটা আমার ভেতরে কিভাবে এল?
একটু পেছনে যদি যাই তখন এই ব্যাপারটা আপনাদের চোখে পড়ার কথা। গত ১৫ পনের বছরে আওয়ামীলীগ এমন একটা সংস্কৃতি তৈরি করেছে যেখানে বিরোধী মতে কাউকে ধরে মেরে ফেলে কেবল শিবির ট্যাগ দিলেই হয়ে গেল ! ব্যাস আর কিছু না । ব্যাপারটা এমন যে শিবির মারাটা স্বাভাবিক ব্যাপার ! তার কোন অপরাধ থাকারও দরকার নেই। সে কেবল শিবির করে কিংবা শিবির ট্যাগ দেওয়া, যে কাউকে মেরে কেবল শিবির ট্যাগ দিলেই হয়ে গেল ! এমন কি আপনি যদি এই অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যার প্রতিবাদ করতে যান তখন আপনাকেও শিবির ট্যাগ দেওয়া হবে । মানুষ তখন এই ট্যাগ খাওয়ার ভরেই কোন কিছু বলে নি, বলতে পারে নি ।
বুয়েটের আবরারের কথা তো মনে আছে? ২০/২৫ জনের একটা দল হলের ঘরে একটা ছেলেকে বেদম পিটিয়ে মেরে ফেলল। এর থেকে বড় অন্যায় কিছু কি হতে পারে? কিন্তু সেই সময়ে আমাদের ব্লগেই দেখবেন আওয়ামী ঘরনার কয়েকজন ব্লগার এই পিটিয়ে মেরেটা ফেলাটা থেকেও আবরারকে শিবির ট্যাগ দেওয়াই বেশি মূখ্য। এই কদিন আগেই আবু সাইদের কথাই যদি ধরেন। প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে গুলি চালিয়ে মৃত্যুর পরে মোদীর ভাই কামালের মত ব্লগাররা তাকে শিবির ট্যাগ দেওয়াতেই আগ্রহী বেশি ।
অথচ দেখেন আজকে ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের অবস্থা কেমন ? ফেসবুকে যখন কোন ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগের মৃত্যুর সংবাদ আসে তখন কেউ ইন্নালিল্লাহ বলে না, আলহামদুলিল্লাহ বলে ! কী প্যাথেটিক একটা অবস্থা একবার কল্পনা করে দেখেছেন কি?
গতকাল রিল দেখতে গিয়ে একটা ভিডিও সামনে এল ! ঘটনাটা সম্ভবত ২০২২ সালের ঘটনা । ভিডিও সে নিজেকে ছাত্রদলের কর্মী হিসাবে পরিচয় দিল । কাঁদতে কাঁদতে বলছে ছাত্রলীগের লোকজন তাকে না পেয়ে তার বাবাকে মারধোর করে এবং পরে তার বাবা মারা যায়। সে কাঁদতে কাঁদতেই বলে ‘আমার অপরাধ যে আমি ছাত্রদল করি। আমার ছাত্রদল করা যদি অপরাধ হয় তাহলে এই বাংলাদেশের মাটিতে একদিন ছাত্রলীগ আওয়ামীলীগ করাও অপরাধ হবে’ ।
এন্ড সি ! আজকে সেই দিন চলে এসেছে ! এখন দেখবেন আপনাদেরই সৃষ্টি করা কালচার এখন এখন আপনাদেরই উপরে প্রয়োগ করা হবে ! আপনাদের উপরে হামলা কেউ এগিয়ে আসবে না। কেউ একটু সহানুভূতি দেখাবে না। কেউ কেউ আবার ইন্নালিল্লাহর জায়গাতে আলহামদুলিল্লাহ বলবে !
কিন্তু আওয়ামীলীগের সৃষ্ট এই কালচারের অবসান হোক! বিএনপি জামাত তারপর সাধারণ ছাত্র (যদিও এরা এখন আর আগের সেই সাধারণ ছাত্র নেই), আপনাদের কাছে অনুরোধ যে আওয়ামীলীগের সৃষ্ট এই কালচারের পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন না । কোন এক মনীষী বলেছিলেন, মানুষের উপর আপনি ততখানি জুলুমই করবে যতখানি আপনি নিজে সহ্য করতে পারবেন । ক্ষমতা কখনই আজীবন থাকে না। মানুষ কম করে হলেও ৭০/৮০ বছর বাঁচে কিন্তু ক্ষমতা বড়জোর ৫/১০ বছর থাকবে। বাকি সময়টা কী করবেন একবার ভেবে দেখেছেন? আওয়ামীলীগ ভেবেছিল ওরা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে দেখেন ১০ বছরেই অবৈধ ক্ষমতায় অবসান ঘটেছে। এমন ভাবে জেকে বসা ফ্যাসিবাদকে যদি উৎখাত করা যায় তাহলে যে কাউকেই উৎখাত করা যাবে। তাই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন।