যেকোনো দেশের অর্থনীতির চাকা সঠিকভাবে ঘুরানোর জন্য সেই দেশের তুলনামূলক সুবিধা (Comparative Advantage) বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হয়। যেমন ধরুন, একটি দেশে প্রচুর নারিকেল গাছ জন্মে। অন্য একটি দেশের মাটি চা উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এখন, নারিকেল যে দেশে প্রচুর উৎপাদিত হয়, তারা নারিকেল থেকে তেল উৎপাদনের জন্য কারখানা তৈরি করল। সেই কারখানাতে নারিকেল তেল তৈরি হলো, এবং তেল সারাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হলো। এভাবে সেই দেশে একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটতে পারে। এখন, এই যে দেখা গেল নারিকেল তেলের কারখানা দিয়ে এই দেশ উন্নয়ন করছে, পাশের দেশ যেখানে চায়ের জন্য উপযুক্ত জমি আছে, তারা যদি নারিকেল তেলের কারখানা তৈরি করে, তারা কি উন্নতি করতে পারবে? কিন্তু যদি তারা নারিকেল তেলের কারখানা দেয়, দেখা যাবে তাদের কারখানার জন্য পর্যাপ্ত নারিকেল নেই। থাকবে কীভাবে? নারিকেল তো তাদের দেশে পাওয়া যায় না। তাদের দেশে কী পাওয়া যায় বেশি পরিমাণে? চা! তাদের দেশে প্রচুর চা উৎপাদন হয়। এই দেশ যদি উন্নতি করতে চায়, তাহলে তাদের প্রয়োজন অধিক পরিমাণে চায়ের কারখানা তৈরি করা।
আমাদের দেশের দিকে তাকালে, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কী জিনিসটি আমাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে আছে? আমাদের নেই পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, নেই উন্নত প্রযুক্তি। আমাদের যা আছে, তা হলো প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক। প্রয়োজনের তুলনায় অধিক শ্রমিক। আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর ক্ষেত্রে এমন সব কারখানা ও শিল্পের প্রয়োজন, যেখানে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিকের দরকার হয়।
যদি এমন কারখানা আমাদের দেশে তৈরি হয়, যেখানে পুরো কারখানার কাজ সামলাতে ১০ জন শ্রমিক লাগে, তবে কি দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইবে? না। কারণ, অর্থনীতির চাকা ভালোভাবে ঘোরানোর জন্য আমাদের এমন সব শিল্পের দরকার, যেখানে প্রচুর পরিমাণে শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। সরকারের এই কাজটাই সবার আগে প্রয়োজন; কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী শিল্পের দিকে নজর দেওয়া, এমন কাজে হাত দেওয়া যেখানে হাজার হাজার, কিংবা লাখ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে! তবে হ্যা একটি বিষয় মনে রাখা দরকার—কেবলমাত্র অধিক শ্রমশক্তির উপস্থিতি দিয়ে নয়, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হয়। শ্রমনির্ভর শিল্পগুলোর পাশাপাশি, প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও উন্নতি সম্ভব। তাই কৌশলগতভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন। তবে আমাদের প্রধা লক্ষ্যই থাকতে হবে কিভাবে আরও অধিক ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় !