শিরোনাম দেখেই আপনার মনে হতে পারে যে আরে বিএনপিকে আবার ভয় পাওয়ার কী আছে ?
কথা কিন্তু আসলেও সত্যি । গত ১২/১৩ বছর ধরে সরকার বিএনপির অবস্থা এমন করেছে যে বিএনপিকে সত্যিই সরকারের ভয়ের কোন কারণ নেই । সরকারের যা শক্তি তাতে বিএনপি এখন কোন ভাবেই সরকার পতন করাতে পারবে না । সেই শক্তি বিএনপির নেই । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপির সমাবেশকে ভয় পাওয়ার কি কোন কারণ আছে? দেখেন সামান্য এই সমাবেশ ঠেকাতে সরকার নগ্ন ভাবে কী না করছে । যেখানে যেখানে সমাবেশ সেখানে সেখানে দুইদিন আগে থেকে শ্রমিকলীগ ধর্মঘট ডাকছে অদ্ভুত সব দাবি নিয়ে । তারপর সমাবেশ শেষ হলে সেই দাবিও শেষ হয়ে যাচ্ছে । আবার অন্য স্থানে সমাবেশ আবারও সেই ধর্মঘট । কী এক কাজকর্ম সরকার করলো এই কদিন ।
সব চেয়ে বড় কমেডি করলো এই দুইদিন । আমার স্কুল বন্ধু বাসায় গিয়েছিলো । কাল ফিরতে গিয়ে এই সরকারের ব্যারিকেডের সামনে পড়েছে । তার ব্যাগ তো চেক করেছে মোবাইল পর্যন্ত চেক করা হয়েছে । ব্যাগে বোমা নিয়ে ঢাকাতে ঢুকছএ কিনা সেটা না হয় চেক করলো কিন্তু মোবাইল কেন চেক করবে? মোবাইল হচ্ছে মানুষের একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার । কোন সভ্য দেশে এই ভাবে বিনা ওয়ারেন্টে কোন ভাবেই কারো মোবাইল চেক করার অধিকার রাখে না পুলিশ । তবুও এটাই করা হয়েছে ! এতো ডেসপারেট কেন সরকার?
বর্তমান সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যে কোন কিছু করতে পারে । এখন যা কিছু যা সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে পারে সব কিছু সরকারের জন্য হুমকি স্বরূপ । এবং সেটা কোন ভাবেই বিএনপি না । তাহলে এতো ভয় কেন বিএনপি কে? কেন এই আচরন ?
সমাবেশ করতে চাচ্ছে করুক । করুক । করে চলে যাবে । গত ১০ বছরে এই রকম কত সমাবেশ হল কী এলো গেল? সরকার কী জানে না? সব জানে তারা । কিছু কিছু বলদ অবশ্য মনে করে প্রধানমন্ত্রী পারদর্শী নন । দেশ চালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী না, তার আশের পাশের মানুষজন । এই সমস্ত বেকুবদের না আছে রাজনৈতিক জ্ঞান না আছে স্বাভাবিক কোন জ্ঞান । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন, তার ভাল মন্দ দিক নিয়ে কথা বলতে পারেন কিন্তু তার মত দুরদর্শী একজন রাজনৈতিক এই দেশে খুবই কমই এসেছে । এই কথা যদি আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি একজন উন্নতি শ্রেণীর বলদ ছাড়া আর কিছুই নন । এই রকম বলদের সংখ্যা আমাদের আশে পাশে অবশ্য আছে ।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একটা দেশের সরকার পতন কয়েক ভাবে হতে পারে । এক যদি মিলিটারি ক্যু করে । এই ক্যু বিভিন্ন দেশে হয়েছে আমাদের দেশেও হয়েছে । এটা প্রধানমন্ত্রীও জানেন খুব ভাল করেই । সেই মোতাবেক ব্যবস্থা তিনি গ্রহন করেছেন সবার আগে । তারপর যদি তার সচিবলায় যদি তার বিরুদ্ধে চলে যায় । এরশাদ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন আর্মি তার নিরয়ন্ত্রনে ছিল । জনগন শত আন্দলোন করেও তাকে নামাতে পারছিলো না । ক্ষমতায় বসে ছিল তখন এই সচিবলায় আর সরকারি কর্মকর্তা কাজ করা বন্ধ করে দিল । একটা দেশের সচিবলায় যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে সেই সরকার কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারে না । এই ব্যাপারটাও জানতো সে খুব ভাল করেই । এখন আপনি কেবল যদি সচিবালায় নয়, সকল সরকারি অফিসে যান তাহলে দেখতে পাবেন যে সেখানে সরকার সমর্থক ছাড়া আর কেউ নেই । মানে হচ্ছে কোন ভাবেই এই সমর্থক সরকারের বিপক্ষে যাবে না । এই যে এই দুই পথ বন্ধ । এখন আরেকটা পথ বাকি থাকে সেয়া হচ্ছে জনগন । একমাত্র জনগন ছাড়া আর কেউ সরকার পতন ঘটাতে পারবে না । এই জনগনকেই সরকারের সব থেকে বড় ভয় । বিএনপি অনেক আগে থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ছিল । কিন্তু তাহলে এতো ভয়ের কারণ কী?
কথায় আছে যে ভরা পেটে কখনও বিপ্লব আন্দোলন হয় না । কথাটা কিন্তু মিথ্যা না । যদি দেশের জনগনের পেট ভরা থাকে তার আয় রোজগার ভাল হয়, ছেলে মেয়ে নিয়ে একটু সুখে থাকে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে তারা কোন দিন রাস্তায় নামবে না সেই সরকার যতই স্বৈরাচারী আর একনায়কতন্ত্রই হোক না কেন। বাঙালির আসলে সেসব নিয়ে কোন টেনশন নেই । কে মরলো কে বাঁচলো আর দেশ চালালো তাতে বিপুল জনগনের কিছুই যায় আসে না । দেশে কিছু সুশীল সমাজ বুদ্ধুজীবি সব সময় থাকে তারা হয়তো ঠিক বেঠিক দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে কিন্তু এই সুশীল সমাজ কখনও আন্দোলনে নামে না। নামবেও না । তাদের দ্বারা সরকার পতনের আন্দোলনও হবে না কখনও । সরকার পতনের আন্দোলন একক ভাবে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষেও করা সম্ভব না যদি না সেখানে সাধারণ জনগনের অংশ গ্রহন না হয় ! তবে এটা অবশ্যই সত্য যে কোন রাজনৈতিক দল সেই জনগনকে এক করে ফেলতে পারে এবং নিজেদের দলে টেনে নিয়ে আসতে পারে ! কিন্তু সরকার যদি সেই জনগনের ভাত কাপড়ের সরবারহ নিশ্চিত করতে পারে তাহলে জনগন কখনই নিজের কাজ নিজের ঘর ছেড়ে বের হবে না । যত সময় তাদের পেট ভরা তত সময় সরকার নিরাপদ ।
কিন্তু সমস্যা তখনই হবে যখন দেশের জনগনের হাতে টাকা থাকবে না, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র তারা কিনতে পারবে না, অভাব তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান সময়ে কি দেশের জনগনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভাল? মানে তাদের হাতে কি টাকা আছে? সেই টাকা তাদের জীবন ধারণের জন্য কি যথেষ্ঠ? সেই মাসিক আয় দিয়ে কি তারা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে পারছে? নিজেদের ছেলেমেয়েদের পোশাক পরিচ্ছেদ কিনতে পারছে? সকল চাহিদা কি পূরণ হচ্ছে? সরকার কি পুরণ করতে পারছে?
পারলে ভাল । কোন চিন্তার কারণ নেই । কিন্তু যদি না পরে তাহলে চিন্তার কারণ আছে । আজ কাল হোক চিন্তার কারণ আছে । মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না । এবং এই ক্ষুধার সামনে অন্য কোন চেতনা কাজ করে না ।
সরকারও এটা জানে খুব ভাল করেই । এবং সরকার বাদ দিয়ে অন্য কেউ যদি তাদের এটা নিশ্চয়তা দিতে পারে যে আমি তোমাদের ক্ষুধা অভাব দুর করবো তখন অন্য কোন চেতনা কাজ করবে না । এখানেই সরকারের ভয় !