মিরোস্লাভ পেনকভের লেখা একটি গল্পের নাম ইস্ট অফ দ্য ওয়েস্ট। এই গল্পটি ২০১১ সালে প্রকাশিত হয় এবং ২০১২ সালে বিবিসি ইন্টারন্যাশনাল শর্ট স্টোরি অ্যাওয়ার্ড জেতে। গল্পটি বুলগেরিয়া এবং সার্বিয়ার মধ্যে বিভক্ত একটি গ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা। গ্রামটির আগের নাম ছিল স্টারো সেলো। এই গ্রামে গল্পের কথক তার আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে বসবাস করত। কিন্তু যুদ্ধের পরে এই গ্রামটি দুই ভাগ হয়ে যায়। একটি অংশ পড়ে বুলগেরিয়ায় এবং অন্য অংশ পড়ে সার্বিয়ায়। এর ফলে গ্রামের একটি অংশ চলে অন্য দেশে। গল্পের কথকের কাজিন ভেরা তার পরিবার নিয়ে সার্বিয়ার নাগরিক হয়ে যায়। পাঁচ বছরে একবার দুই গ্রামের মানুষ তাদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করার একটি সুযোগ পায়। তখন তারা বর্ডার পার করে অন্য গ্রামে আসতে পারে। এভাবেই তাদের ভেতরে প্রিয়জনের কাছে যাওয়ার একটি সুযোগ আসে। এই কাছে আসার দিনটি তাদের দুই গ্রামের মাঝে একটি উৎসবে পরিণত হয়। দিনের পর দিন দুই গ্রামের মানুষ এভাবে প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
এদিকে গল্পের কথক তার কাজিনকে পছন্দ করে সেই ছোটবেলা থেকে। তারা মাঝে মাঝে গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নদী পেরিয়ে লুকিয়ে দেখাও করে। এভাবেই তাদের দিন পার হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তখন তাদের জীবনে একটি দুর্যোগ নেমে আসে। কথকের বড় বোন ঠিক একইভাবে ভেরার গ্রামের একটি ছেলের সাথে প্রেম করে, তারাও এভাবে নদী পার হয়ে একে অপরের সাথে দেখা করে। একসময় কথকের বোনের সাথে সেই ছেলের বিয়ে ঠিক হয়। সবকিছু ভালোভাবে চলছিল, কিন্তু দুর্যোগটি নেমে আসে। বিয়ের দুই দিন আগে তারা আবার একে অপরের সাথে দেখা করার জন্য রাতের বেলা লুকিয়ে নদী পার হতে যায়, তবে এবার নদীর ধারে পাহারা দেওয়া বন্দুকধারী গার্ড তাদের উদ্দেশ্যে গুলি চালায় আর দুজনই মারা পড়ে। এই মৃত্যুতে কথকের পরিবার একেবারে ভেঙে পড়ে এবং একই সাথে বছরব্যাপী যে দুই গ্রামের দেখা হওয়ার উৎসব ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে কথকের বোন মারা যাওয়ার শোকে তার মা মারা যায়। বাবা মদের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। কথক নিজে খনিতে চাকরি নিয়ে সংসার এগিয়ে নিয়ে যায়। একসময়ে ভেরার বিয়ে হয়ে যায়। একটি সন্তানও হয়। ভেরাকে হারিয়ে ফেলার কষ্টে কথক জর্জরিত হয়। তবে জীবন তো আর থেমে থাকে না। জীবন নিজের নিয়মে এগিয়ে চলে। তারপর তার নেশাগ্রস্ত বাবা মারা যায় আর এরই ভেতরে কথক জানতে পারে যে ভেরার স্বামীও মারা গেছে। তখন কথক ঠিক করে যে সে ভেরার কাছে যাবে। সে নদীপাড়ের গার্ডদের ঘুষ দিয়ে ভেরার বাসায় গিয়ে হাজির হয়। মনের ভেতরে তার নতুন আশা জম্ম দেয় যে শেষ পর্যন্ত সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাবে। কিন্তু যখন ভেরা বের হয়ে আসে, তখন দেখা যায় ভেরা নতুন একজন সঙ্গীকে বেছে নিয়েছে।
গল্পটি শেষ করে অদ্ভুত এক বিষণ্নতা নেমে আসে মনে। কথক জীবনের সবকিছু হারিয়ে একেবারে পিছুটানহীন হয়ে গেল। বোন, মা, তারপর বাবা মারা যাওয়ার পরে শেষ বাঁধনটুকু ছিল তার ভালোবাসার মানুষ ভেরা, কিন্তু যখন সেও অন্য কারও হয়ে গেল, তখন তার আর কিছুই রইল না। মানুষ আসলে এভাবে কি একা হতে পারে? একেবারে পরিপূর্ণভাবে পিছুটানহীন? এই গল্পটি নিজের ভেতরে আরও ভালোভাবে অনুভব করার কারণ হলো সামনের জীবনে আমি নিজেও হয়তো এই কথকের মতো এইভাবে পিছুটানহীন হয়ে যাব!
Comments
Post a Comment