নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংবেদনশীল কেন নয়?

 আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যথেষ্ঠ পরিমান সংবেদনশীল নয়, কিংবা আরও ভাল করে বললে আমরা ঠিক যতখানি আশা করি তারা সংবেদনশীল হোক ততটা সংবেদনশীল তারা নয়। এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। এর পেছনে দায়টা কেবল যে তাদের, ব্যাপারটা এমনও নয়। আমরা তো দোষ দিয়েই খালাস কিন্তু আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংবেদন্সশীল করতে কী কী কাজ করেছি বলেন? আমি যদি আপনাকে প্রশ্ন করি তাহলে আপনার উত্তর টা কী হবে? আপনার বাসায় কয়টা মুক্তিযুদ্ধের বই আছে? আপনি কবে নিজেদের ছেলে মেয়েদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছেন বলেন? আমাদের প্রজন্ম কিংবা আমাদের আগের প্রজন্মের বেশির ভাগ মানুষই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন কিছুই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয় নি। তাহলে আমরা তাদের অভিযোগ করি কোন হিসাবে?

আমাদের নতুন প্রজন্ম বা জুলাই প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে চিনেছে কেবলই আওয়ামী রাজনৈতিক টুল হিসাবে। তাদেরকে জোর করেই গেলানো হয়েছে আওয়ামী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে যে আওয়ামীলীগই আসলে মুক্তিযুদ্ধ করেছে তার কেউ কিছুই করে নি। এই তরতাজা মিথ্যাটা তারা একটু বড় হয়েই বুঝতে পেরেছে নিজে নিজেই। তখন তাদের এই পুরো ইতিহাসের ব্যাপারেই একটা বিরূপ মনভাব সৃষ্টি হয়েছে। একবার কেবল ব্যাপারটা তাদের জায়গা থেকে কল্পনা করার চেষ্টা করেই দেখুন। আপনাকে ছোটবেলা থেকে একটা ব্যাপার জেনে বড় হচ্ছেন তারপর একসময়ে নিজেই তার ভেতরের ফাঁক ফোকর টের পেতে থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই আপনার সেই ব্যাপারটার উপর থেকে আগ্রহ চলে যাবে। 

এখানে অবশ্য আরেকটা স্বাভাবিক ফ্যাক্টরও কাজ করে। সেটা হচ্ছে সময়। আমার বাবা-দাদারা মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি প্রজন্ম। তারা এই ব্যাপারটা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের কাছে এই ব্যাপারটা নিয়ে যতখানি আবেগ কাজ করবে আমাদের ভেতরে সেই পরিমান আবেগ কিন্তু কাজ করবে না। আমরা, মানে হচ্ছে আমাদের প্রজন্ম যতই আলগা পিরিত দেখাই না কেন মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে, আমরা কোন ভাবেই আমাদের বাবা দাদাদের মত করে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ কিংবা অনুধাবন করতে পারব না। এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। একই ব্যাপারটা খাটে এই নতুন প্রজন্মের ব্যাপারে। এদের মাঝে প্রজন্মের ব্যবধান। এবং এই ব্যাপারটা যত প্রজন্ম পার হবে তত ভাল করে ধরা পড়বে। 

এছাড়া যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি, কিংবা মুক্তিযুদ্ধের যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হয় নি, তারা এই মুক্তিযুদ্ধকে সরাসরি অংশগ্রহন বা ক্ষতিগ্রস্থদের মত করে অনুভব করতে পারবে না। এটাও কোন ভাবে সম্ভব না। ভাবুন তো আপনার বন্ধুর বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা আর আপনার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করে নি। এখন আপনার বন্ধু মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যতটা আবেগী আপনি কি তার পরিমান আবেগ ধারণ করতে পারবেন? কোনো ভাবেই পারবেন না। আমি বলছি না যে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আপনার অনুভূতি মিথ্যা কিন্তু সেটা কোনো ভাবেই আপনার বন্ধুর মত কিংবা সমান হবে না। সিম্পল এটা সম্ভবই না। একই ভাবে আপনার বন্ধুর বাবা যদি মুক্তিযুদ্ধের শহীদ হয়ে থাকে আর আপনার বাবা যদি যুদ্ধ না করে তাহলে তার মত করে আপনি মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে পারবেন না। আমাদের নতুন প্রজন্মের সাথেও ঠিক এই একই ব্যাপারটা হয়েছে কিংবা হচ্ছে। এখনকার প্রজন্মের বাবারা বলতে গেলে কেউই মুক্তিযুদ্ধ করে নি। যেখানে তাদের বাবারাই যুদ্ধ করে নি, তাদের নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধের প্রতি সেই আবেগ নেই, তাহলে তাদের সন্তানদের ভেতরে সেই আবেগ আসলে আসবে কোথা থেকে? আপনাকে প্রশ্ন করি আপনি পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা অনুভব করেন অথচ বৃটিশদের প্রতি কেন ঘৃণা অনুভব করেন না? দুইদেশই আমাদের দেশের উপর ভয়ানক শোষণ চালিয়েছে।



Comments