গুজব চলছে


 আমাদের সামনে সব সবার প্রথম যে বড় গুজবটা এসেছিল সেটা সম্ভবত শাপলা চত্তরে হত্যাকাণ্ডের গুজব। হাজার হাজার হেপাজত কর্মীকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলা হয়েছে। এই গুজবটা সম্ভবত এখনও চালু আছে। মাঝের কয়েকজন মিলিয়ে গিয়েছিল। এখন শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। 

এখন সোস্যাল মিডিয়া গুজব ছাড়া আর কিছু নেই। প্রথমআলো, যমুনা টিভি এবং আরটিভি এই তিন মিডিয়ার টেমপ্লেট ব্যবহার করে যে কেউ যা কিছু ছড়িয়ে দিচ্ছে। এবং অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে যে প্রচুর মানুষ সেই সব খবর কোন প্রকার যাচাই বাছাই এমন কি ন্যূনতম বিচার বিবেচনা ছাড়াই, সেগুলো বিশ্বাস করে নিচ্ছে আর সেটাকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে যে খবরর নিজেদের পক্ষে যাচ্ছে সেটা কোন প্রকার বাছবিছা ছাড়াই শেয়ার পোস্ট করে দিচ্ছে। একটা গুজবটা আমি দেখলাম মেহজাবিনকে নিয়ে। মেহজাবিনের একটা পুরানো নাটকের স্যুটিংয়ের ছবি, যেখানে দেখা যাচ্ছে মেহজাবিনের মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, সেই ছবি দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে যে শোরূমে গিয়ে তার উপরে হামলা হয়েছে। এই পোস্টটা আওয়ামী ঘরোয়ানার পাব্লিকরা খুব খাচ্ছে। 

সেই শুরুতে বাঁশেরকেল্লা এই টাইপের গুজব ছড়াতে ওস্তাদ ছিল। আর এখন আওয়ামীলীগের লোকজন একেবারে সবার এগিয়ে। এমন অনেক মানুষকদের এই তিন মাসে আমি গুজব ছড়াতে দেখলাম যাদেরকে এক সময় আমি ফলো করতাম, যাদের লেখা পছন্দ করতাম তাদের অথেন্টিসিটির কারণে। কেবল মাত্র দলীয় দাসত্ব একটা মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় ! এমন আমাদের পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব জয়ের পেইজ থেকেও বেশ কয়েকটা গুজব ছড়ানো হয়েছে। অভিযোগ বা মতামত না, সরাসরি গুজব যেগুলো পররে রিউমার স্ক্যানে সেই গুজব গুলো ধরাও পড়েছে। তবুও কিন্তু সেগুলো সরানো হয় নি।

গুজব সাধারণত দুই ধরণের মানুষ ছড়ায়। এক হচ্ছে নিজে জেনে বুঝে আর আরেক হচ্ছে না বুঝে। এই দুই ধরনের মানুষ থেকে একেবারে দুরে থাকছি। যে একবার গুজব ছড়াবে, সেটা সে জেনে হোক কিংবা বুঝে তার কাছ থেকে আর কোন ইনফরমেশন নেওয়া যাবে না। তার কথা আর সিরিয়াসলি নেওয়া যাবে না। তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে হবে। এই ব্লগেও রয়েছে কয়েকজন । বিশেষ করে আওয়ামী ঘরোয়ানার কয়েকজন । এরা সরাসরি আওয়ামী গ্রুপ পেইজের এই গুজব গুলো সামুর পাতায় এনে ডাম্প করছে। অন্তত চারজনের নাম স্পষ্ট করে বলা যায় এই পোস্ট ।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একটা খবরর গুজব কিনা সেটা শুধু মাত্র নিজের কমনসেন্স ব্যবহার করলেই বোঝা যায়। সেই শাপলা চত্তরের খবরটাই যদি ধরি। সেখানে যদি বলা হল যে হাজার হাজার হেপাজত কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মানুষকেই খুন করে লাশ গুম করা যায় না আর সেখানে হাজার হাজার লাশ ! ধরেই নিলাম যে খুন হয়েছে তাহলে লাশ গেল কোথায়? সত্যিই কি মনে হয় যে এই এক রাতের মধ্যে শাপলা চত্ত্বরের মত জায়গা থেকে কয়েক হাজার লাশ একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা সম্ভব? এটা আসলেই সম্ভব? তারপরেও আরেকটা বড় কথা হচ্ছে সেই যে লাশ গুম করে ফেলল তাহলে সেই মানুষ গুলোর কই গেল? কেউ তাদের খোজ করল না? ব্যাপারটা কি এমন যে সেই সময়ে সরকার লাশ গুমের সাথে সাথে মানুষের মন থেকে অদ্ভুত জাদু বলে তাদের নামও মুছে দিয়েছে? আমি যদি আজকে হারিয়ে যাই আমার বাবা মা আমাকে খোজ করবে, আমার বন্ধু বান্ধব আমার খোজ করবে। এই ব্লগের কেউ হয়তো একটা পোস্ট দিবে যে অপু তানভীর গেল কই অনেক দিন দেখি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেই শাপলা চত্তরে গিয়ে ফিরে না আসা কতজন কর্মীর এই রকম মিসিং রিপোর্ট আছে? সেই লিস্ট টা কই? যদি সত্যিই সেদিন মানুষ মারা যেত তাহলে এই হারিয়ে যাওয়া মানুষের একটা তালিকা থাকবে। সেটা কোথায়? 

শেখ হাসিনা পালানোর পরে ঠিক একই ভাবে একটা গুজব ছড়ানো হয়েছে যে ৩৪৩৮ জন পুলিশকে নাকি হত্যা করা হয়েছে। একদম এরা সংখ্যা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। কতজন পুলিশ মারা গেছে তার একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে । সেই সাথে কতজন পুলিশ এখনও কাজে যোগ দেয় নি তারও একটা তালিকা আছে। বাংলাদেশের পুলিশের সংখ্যার তো একটা নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে। সেই তালিকার ভেতরে সবাই যোগ দিন কাজে, মানে তারা যে বেচে আছে সেটার একটা চাক্ষুশ প্রমান করেছে। তাহলে এই তিন হাজার কথাটা কোথা থেকে আসল? আর আপনি সেটা বিশ্বাসই করছেন কোন যুক্তিতে?আপদের অবস্থা তো সেই হেপাজতের থেকেও খারাপ । হেপাজতের কর্মী, মাদ্রাসার ছাত্রদের তো নির্দিষ্ট তালিকা নেই কিন্তু পুলিশের তো আছে। তযদি বলা হয় তাহলে দেন বা কোথা জানলেন সেটা বলেন তখন কেউ এক বাটপারের ভিডিও দেয় আবার কেউ বলে আমি মিথ্যা বলি না আমি। আরে বলদা জানিস তো বলিস না কেন ? এই তথ্যপ্রজুক্তির যুগে তথ্য লুকিয়ে রাখা যায় এতো সহজে ! তোর কাছে প্রমান থাকলে প্রকাশ কর । 

আওয়ামীলীগ এমন এমন একটা দল এরা ক্ষমতা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। যদি এরা আজকে পারত আজকেই ক্ষমতা দখল করে নিত। এরা আসছে না কারণ এদের কোন ক্ষমতা নেই এখন। যেদিন এরা ক্ষমতা অর্জন করবে সেদিনই হামলা করবে। এখন এটা নেই দেখেই সারাদিন অনলাইনে বসে গুজব ছড়িয়ে চলেছে ।