আওয়ামী জুজু

 



আমরা অনেকেই জুজুর সাথে পরিচিত। ছোটবেলায় আমরা যখন আমাদের মায়েদের কথা শুনতে চাইতাম না তখন আমাদের মায়েরা আমাদের এই জুজুর ভয় দেখাত। ভাত খেয়ে নাও নয়তো জুজু চলে আসবে, এটা কর নয়তো জুজু আসবে ওখানে যেও না নয়তো জুজু আসবে। বাস্তবিক অর্থে সেই জুজু কোন দিন আসে নি। ছোট বয়সে এই জুজুর ভয় আমরা পেলেও একটা বয়স পার হয়ে যাওয়ার পরে আমরা নিজেই উপলব্ধি করতে শুরু করি যে জুজু বলে  আসলে কিছু নেই আর থাকলেও সে কখনো আসবে না।

আমাদের সবার প্রিয় আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও আমাদের এই জুজুর ভয় দেখানো শুরু হয়েছে। এই কাজে কোর আওয়ামী সমর্থকরা তো বটেই সুশীল মানুষরাও মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে এখনও করছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকতে হবে, নয়তো এটা হবে, নয়তো ওটা হবে । এমন অনেক জুজু আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে আওয়ামীলীগ। 

এখন প্রায়ই এই সব জুজুর ভয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থাকলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হবে। এই আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় গত দশ বছরে ধর্মীয় সংখ্যা লঘুদের উপরে, তাদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপরে কম করে হলেও দুই হাজারের উপরে হামলা হয়েছে। এই বছরের মে মাসে, আন্দোলন শুরুর আগের মাসেও প্রায় ১১টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। নতুন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তাদের সময়েও হয়তো হবে হামলা । কিন্তু আমাদের চোখের আমরা দেখতে পাচ্ছি যেখানে আওয়ামী আমলেই দুই হাজারের উপরে হামলা হয়েছে কিন্তু আমাদের মনে জুজুর ভয় ঢুকানো হয়েছে আওয়ামী আমল ছাড়া অন্য আমলে হামলা হবে।

আরেক জুজুর ভয় হচ্ছে জঙ্গির ভয়। আমার চোখে দেখা দেখা দেশে এখনও সব থেকে বড় দুইটা জঙ্গি হামলা এবং সব থেকে বেশি মানুষ মেরে ফেলার ঘটনার দুইটাই ঘুটেছে আওয়ামী আমলেই। রমনার বটমূলে হামলা আর হলি হার্টিজানে হামলা । যদিও অনেকের মনে হলি হার্টিজানের হামলা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অনেকেই মনে করে এটা আসলে আওয়ামীর ষড়যন্ত্রের অংশ । অথচ তারা জুজুর ভয় দেখায় যে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ভরে যাবে জঙ্গিতে। 

এই রকম আরও অনেক জুজুর ভয় আমাদের দেখানো হয়েছে। এই যেমন আওয়ামীলীগ না থাকলে মেয়েরা আর ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। মেয়েরা চুল খুলে বাইরে যেতে পারবে না, তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে বোরখা পরতে হবে। দেশে শরীয়া আইন চালু হবে, মেয়েদের চাকরি করতে দেওয়া হবে না। 

ব্লগারদের হত্যা করা হবে। অথচ দেখেন যত ব্লগার হত্যা হয়েছে সব কিন্তু এই আওয়ামীলীগের আমলেই হয়েছে। এই রকম আরও কত জুজুর ভয় যে তারা দেখিয়েছে তার কোন ঠিক নেই। 

আওয়ামীলীগ না থাকলে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হবে না, দেশ ভরে যাবে দুর্নীতিতে। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামীলীগ যে পরিমান দুর্নীতি করেছে অন্য কোন সরকার সেই পরিমান দুর্নীতি করে নি। আওয়ামীলীগের এই আমলের দুর্নীতির কাছে অন্য সব টার্মের দুর্নীতি ফেল করেছে। 

দেশের এমন একটা সেক্টর নেই যেখানে আওয়ামী দুর্নীতির থাবা পরে নি। যখন স্বৈরাচার এরশাদ যখন ক্ষমতা ছেড়ে দেয় তখন সে ক্ষমতা ছাড়ে সেই সময়ের প্রধান বিচারপতির হাতে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ বিএনপি সেটা মেনেও নেয়। বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্বৈরশাসক হিসাবে এরশাদের নাম ছিল কিন্তু দেখেন সেই স্বৈরশাসকও বিচার বিভাগকে এতোটা কলুষিত করে নাই যতটা না আওয়ামী সরকার করেছে। 

দেশের সব থেকে বড় জুজু হচ্ছে আওয়ামীলীগ । এর থেকে বড় ভয়ের আর কিছু নেই। আমি বলছি না যে আওয়ামীলীগের বিদায়ে সব সমাধান হয়ে যাবে। হয়তো সব কিছু আগের মতই হবে। আগের মতই দুর্নীতি হবে। তবে যাই হোক না কেন সেটা আওয়ামীলীগের আমল থেকে ভাল হবে, এটা নিশ্চিত থাকুন । এমন কি পরে যখন আবার আওয়ামীলীগ আসবে সেটাই এই আওয়ামীলীগ থেকে ভাল হবে।










Comments