জোর করে ধর্ম পালন

আমরা আমাদের মুসলমানদের মহান হওয়ার কতশত গল্প শুনি বইয়ে কিংবা আমাদের হুজুরদের বয়ানে । এই বিষয়ে আলোচণা করে লাভ নেই । আমি অবশ্য আমাদের জাতিতে বিচার করি আমার চোখের সামনে আমি তাদের যেভাবে দেখছি সেভাবে । অনেকে আমার সাথে হয়তো এক মত হবে না । তারা এখনও আমাদের পরিচয় দিতে গিয়ে আমাদের সম্পর্কে বইতে যেমনটা লেখা আছে সেটা বিষয়ে আলোচনা করতেই বেশি ভাল ভাসে । 

আমি সব সময় ধর্ম বিষয়ে স্বাধীনতায় বিশ্বাসী । খুব সহজ ভাবে একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখুন । ধরুন আমি নামাজ পড়তে চাই না । কিন্তু আমাদের দেশের নিয়ম আছে যে যে নামাজ পড়বে না তাদের জেল দিয়ে দিবে । এখন আমি বাধ্য হয়ে যদি নামাজ পড়ি এই জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেটা কি লাভ হবে? অথবা একদল উগ্র ধার্মিক আমাকে প্রতিদিন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আমাকে দিয়ে ধর্ম কর্ম করায় সেই ধর্মের কি কোন ফয়দা আছে?

আবার চিন্তা করেন যে আমি নামাজ পড়তে চাই কিন্তু এমন আইন আছে যে নামাজ পড়া দেখলেই জেল জরিমানা হবে কিংবা একদল উগ্র আমাকে অস্ত্রের মুখে নামাজ পড়তে দিচ্ছেনা । আপনার কি মনে হয়? কোন ক্ষেত্রে উপরওয়ালা আমাকে নেকি দিবেন ?


ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই । থাকতে পারে না ।  যদি কোন ধর্ম জোর জবর দস্তি থাকে তাহ্লে সেটা ধর্ম নেই । ধর্ম মানে হচ্ছে আমার সম্পূর্ণ মানসিক সাবমিশন টু গড । উপরওয়ালার কাছে নিজ ইচ্ছায়, কোণ ভয় ভীতির কথা চিন্তা না করে কাউকে ভয় না পেয়ে উপরওয়ালাকে ভালোবাসা । কিন্তু আমাদের দেশে কি তাই হয় !

একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশের অসংখ্য মুসলিমের এই মনভাব যে তারা পুরো বিশ্ব ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় । এমন সেটা যদি অস্ত্রের মুখে, বন্ধুকের মুখে কিংবা জোর করে যদি হয় তাতেও কার আপত্তি নেই । এর ফলে ব্যাপারটা কী দাড়ান জানেন? আপনি যখন ভাবেন যে অস্ত্রের মুখে জোড় করে আমি কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাই সেই ক্ষেত্রে একই সকম সব অন্যায় কে বৈধপ্তা দেওয়া হয় । মানে বুঝলেন না?

মানেটা হচ্ছে, যদি আপনি মনে করেন যে মুসলামরা যদি জোড় করে অন্য দেশের উপর আক্রমন করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সঠিক তাহলে আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে অন্য কোন ধর্ম যদি মুসলাম দেশের উপর আক্রমন করে তাদের ধর্ম প্রতিষ্টা করেন সেটাও সঠিক । 

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা আবার আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা মানেন না । তাদের কাছে মুসলিন জোড় করলে ঠিক আছে, জোড় করে কিছু চাপিয়ে দিলে ঠিক আছে কিন্তু অন্যেরা মুসলিমের উপরে কিছু চাপিয়ে দিলে সেটা ঠিক নেই। মামার বাড়ির আবদারের মত আর কি !


জোর করে চালিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা কোন ক্ষেত্রেই ঠিক না। যদি কোন মুসলন অন্যের উপরে চাপিয়ে দেয় সেটা যেমন ঠিক নেই ঠিক তেমন অন্য কেউ যদি কোন মুসলমানের উপরে চাপিয়ে দেয় সেটাও ঠিক নেই । জোর করে কারো উপরে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া যাবে না । কাউকে ধর্ম পালন করতে বাধ্য করা যাবে না । একই ভাবে কেউ যদি ধর্ম পালন করতে চায় তা যে ধর্মই হোক না কেন সেটাতে বাধা দেওয়া যাবে না । 

কিন্তু আমাদের মুসলমানদের মনভাব দেখেন কত মজার - যদি কেউ অন্য ধর্ম থেকে মুসলিম ধর্মে আসে তাহলে ওকে কিন্তু কেউ যদি মুস্লিম ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে যায় তাহলে ঠিক নেই । 

আপনার ধর্মে পক্ষে হোক বা বিপক্ষে সব সময় জোর করা কিছু চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে থাকতে হবে। জোর করে ধর্ম পালন হয় না এই সহজ কথাটা কেউ বোঝে না । আমরা জোর করে ধর্ম পালনকে খুব ভাল করে সমর্থন করি যদি সেটা আমাদের নিজেদের ধর্মের ক্ষেত্রে হয় । 



Comments