কিছু কিছু ঘটনা সব সময় আমার বিশ্বাসের উপর আঘাত নিয়ে আসে

টুইন ক্যারোল

 ধর্মের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমি নিজেকে বিশ্বাসী বলেই বিশ্বাস করি । ছোট বেলা থেকেই নিয়মিত নামাজ রোজা করে এসেছি । বাড়ির পরিবেশই এমন ছিল যে আপনা আপনিই সেটা ঘরে উঠেছে । কেবল আমিই নই যে কোন মুসলিম পরিবারেই এমন হয় বলে আমার বিশ্বাস । আমরা চাইলেও কখনও ধর্মের বাইরে যেতে পারি না । ছোট বেলা থেকেই সেই বিশ্বাস আমাদের মাঝে বসিয়ে দেওয়া হয় । আমরা এই ধর্ম বিশ্বাস কে এক পাশে রেখে কখনই অন্য দিকে যেতে পারি না । তবে যতই আমি বয়সে বড় হচ্ছি চিন্তা ভাবনার সাথে আরও অনেক কিছু যুক্ত হচ্ছে ততই আমার মনে কেবল বিশ্বাস করতে হবে এই ভাবনার বদলে আরো অনেক কিছু এসে জড় হচ্ছে ।

এই ব্যাপারটা প্রথম ঘটে এই ব্লগে এসেই । প্রথম ব্লগ পড়েই আমার মনে সেই চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন এসেছে । কেবল চোখ কান বুঝে বিশ্বাস করতে হবে এই ভাবনা থেকে বের হয়ে আসতে এই ব্লগের একটা ভূমিকা রয়েছে সেটা বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই । 


তবুও এখনও যেহেতু ধর্ম ব্যাপারটা জীবনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাই এটা রেখে বাইরে বের হওয়া সম্ভব হয় নি । হয়তো সম্ভম হবেও না কোন দিন । তবে মাঝে মাঝে জীবনে এমন সব ঘটনা ঘটে যার ফলে অনেক প্রশ্ন মাথার ভেতরে চলে আসে । যা কোন ভাবেই নিজ থেকে খুজে বের করা সম্ভব না কিংবা প্রচলিত বিশ্বাস দিয়ে সেগুলোর মেনে নেওয়ার কষ্টকর হয়ে যায় । আমার জীবনে প্রথম এমন ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালেই । আমার ক্লাস নাইনে পড়া স্টুডেন্টের ক্যান্সার ধরা পরলো । এবং আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল । কষ্ট না বলে অবাক বললাম যে আমি এখনও এই বিস্ময়টা কাটাতেই পারি নি । এখনও না । আমার এখনও মনে হয় যে এখনই সে আমাকে ফোন দিয়ে বলবে, স্যার আজকে ছুটি দেন আজকে পড়বো না । 

আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আমার দেখা সব থেকে নিঃষ্পাপ একটা মানুষের নাম বল । আমি তার নামই বলব। ওকে আমি সেই ক্লাস ফাইভ থেকে পড়িয়ে এসেছি । আজ কালকার এই যুগে এমন ভাবে ছেলে খুজে পাওয়া খুব একটা সম্ভব হবে না । সিঙ্গাপুর থেকে যখন ওকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, আমি ওকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম । ওর চেহারা দেখে আমি যতখানি ধাক্কা খেয়েছিলাম সেটা এখন আমাকে পীড়া দেয় । আমার কেবল বারবার মনে হয় এই নিঃষ্পাপ ছেলেটার এমন কষ্ট পেয়ে এই ভাবে পৃথিবী থেকে কেন বিদায় নিচ্ছে? কেন এতো কষ্ট পাচ্ছে সে ? উপরওয়ালা তো কারো উপরে অন্যায় করেন না তাহলে এই ছেলের উপর কেন এভাবে অন্যায় করা হচ্ছে?


এরপর কোভোটের সময় দেখেছি কত অসহায় মানুষ । কত অসহায় মানুষ তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে শেষ হয়ে গেছে । একদিন একটা ছবি চোখে আটকে গেল । ফেসবুকে একজন একজন বাদামওয়ালার ছবি পোস্ট করেছে । নিচে লেখা ছিল ছোট একটা গল্প । লোকটার নাম মনে নেই । সে চন্দ্রিমা উদ্দ্যানের বাদাম বিক্রি করতো । কোভিটের কারণে সেখানে লোকজন নেই । ফলে তার বিক্রিও নেই । কিভাবে দিন পার করছে সেটা বলে বোঝানোর উপায় নেই । এই যে জীবন । এই যে জীবন যুদ্ধে পরাজিত মানুষ গুলোর উপর আবার নতুন করে আরেক বোঝা । 


তারপর কয়েকদিন আগে  তুরস্ক সিরিয়াতে হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের ঘটনা । এখনও পর্যন্ত ২১ হাজার লোক মারা গেছে। কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার । এতো এতো নিঃষ্পাপ জীবন এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । অনেকে বলে না উপারওয়ালা যা করেন ভালর জন্য করেন আমার বড় জানতে ইচ্ছে করে এর ভেতরে আসলে কী ভাল আছে? আমি আমার বিশ্বাস দিয়ে কোন ভাল খুজে পাই নি । 

সত্যিই আমি খুজে পাই নি । 

Comments